Here you will find the Long Poem Shindhu \ সিন্ধু of poet Kazi Nazrul Islam
-প্রথম তরঙ্গ- হে সিন্ধু, হে বন্ধু মোর, হে চির-বিরহী, হে অতৃপ্ত! রহি’ রহি’ কোন্ বেদনায় উদ্বেলিয়া ওঠ তুমি কানায় কানায়? কি কথা শুনাতে চাও, কারে কি কহিবে বন্ধু তুমি? প্রতীক্ষায় চেয়ে আছে উর্ধ্বে নীলা নিম্নে বেলা-ভুমি! কথা কও, হে দুরন্ত, বল, তব বুকে কেন এত ঢেউ জাগে, এত কলকল? কিসের এ অশান্ত গর্জন? দিবা নাই রাত্রি নাই, অনন্ত ক্রন্দন থামিল না, বন্ধু, তব! কোথা তব ব্যথা বাজে! মোরে কও, কা’রে নাহি ক’ব! কা’রে তুমি হারালে কখন্? কোন্ মায়া-মণিকার হেরিছ স্বপন? কে সে বালা? কোথা তার ঘর? কবে দেখেছিলে তারে? কেন হ’ল পর যারে এত বাসিয়াছ ভালো! কেন সে আসিল, এসে কেন সে লুকালো? অভিমান ক’রেছে সে? মানিনী ঝেপেছে মুখ নিশীথিনী-কেশে? ঘুমায়েছে একাকিনী জোছনা-বিছানে? চাঁদের চাঁদিনী বুঝি তাই এত টানে তোমার সাগর-প্রাণ, জাগায় জোয়ার? কী রহস্য আছে চাঁদে লুকানো তোমার? বল, বন্ধু বল, ও কি গান? ওকি কাঁদা? ঐ মত্ত জল-ছলছল- ও কি হুহুঙ্কার? ঐ চাঁদ ঐ সে কি প্রেয়সী তোমার? টানিয়া সে মেঘের আড়াল সুদূরিকা সুদূরেই থাকে চিরকাল? চাঁদের কলঙ্ক ঐ, ও কি তব ক্ষুধাতুর চুম্বনের দাগ? দূরে থাকে কলঙ্কিনী, ও কি রাগ? ও কি অনুরাগ? জান না কি, তাই তরঙ্গে আছাড়ি’ মর আক্রোশে বৃথাই?…. মনে লাগে তুমি যেন অনন্ত পুরুষ আপনার স্বপ্নে ছিলে আপনি বেহুঁশ! অশান্ত! প্রশান্ত ছিলে এ-নিখিলে জানিতে না আপনারে ছাড়া। তরঙ্গ ছিল না বুকে, তখনো দোলানী এসে দেয়নি ক’ নাড়া! বিপুল আরশি-সম ছিলে স্বচ্ছ, ছিলে স্থির, তব মুখে মুখ রেখে ঘুমাইত তীর।– তপস্বী! ধেয়ানী! তারপর চাঁদ এলো-কবে, নাহি জানি তুমি যেন উঠিলে শিহরি’। হে মৌনী, কহিলে কথা-“মরি মরি, সুন্দর সুন্দর!” “সুন্দর সুন্দর” গাহি’ জাগিয়া উঠিল চরাচর! সেই সে আদিম শব্দ, সেই আদি কথা, সেই বুঝি নির্জনের সৃজনের ব্যথা, সেই বুঝি বুঝিলে রাজন্ একা সে সুন্দর হয় হইলে দু’জন!… কোথা সে উঠিল চাঁদ হৃদয়ে না নভে সে-কথা জানে না কেউ, জানিবে না, চিরকাল নাহি-জানা র’বে। এতদিনে ভার হ’ল আপনারে নিয়া একা থাকা, কেন যেন মনে হয়-ফাঁকা, সব ফাঁকা কে যেন চাহিছে মোরে, কে যেন কী নাই, যারে পাই তারে যেন আরো পেতে চাই! জাগিল আনন্দ-ব্যথা, জাগিল জোয়ার, লাগিল তরঙ্গে দোলা, ভাঙিল দুয়ার, মাতিয়া উঠিলে তুমি! কাঁপিয়া উঠিল কেঁদে নিদ্রাতুরা ভূমি! বাতাসে উঠিল ব্যেপে তব হতাশ্বাস, জাগিল অন্তত শূন্যে নীলিমা-উছাস! রোমাঞ্চিত হ’ল ধরা, বুক চিরে এল তার তৃণ-ফুল-ফল। এল আলো, এল বায়ু, এল তেজ প্রাণ, জানা ও অজানা ব্যেপে ওঠে সে কি অভিনব গান! এ কি মাতামাতি ওগো এ কি উতরোল! এত বুক ছিল হেথা, ছিল এত কোন! শাখা ও শাখীতে যেন কত জানাশোনা, হাওয়া এসে দোলা দেয়, সেও যেন ছিল জানা কত সে আপনা! জলে জলে ছলাছলি চলমান বেগে, ফুলে হুলে চুমোচুমি-চরাচরে বেলা ওঠে জেগে! আনন্দ-বিহ্বল সব আজ কথা কহে, গাহে গান, করে কোলাহল! বন্ধু ওগো সিন্ধুরাজ! স্বপ্নে চাঁদ-মুখ হেরিয়া উঠিলে জাগি’, ব্যথা ক’রে উঠিল ও-বুক। কী যেন সে ক্ষুধা জাগে, কী যেন সে পীড়া, গ’লে যায় সারা হিয়া, ছিঁড়ে যায় যত স্নায়ু শিরা! নিয়া নেশা, নিয়া ব্যথা-সুখ দুলিয়া উঠিলে সিন্ধু উৎসুক উন্মুখ! কোন্ প্রিয়-বিরহের সুগভীর ছায়া তোমাতে পড়িল যেন, নীল হ’ল তব স্বচ্ছ কায়া! সিন্ধু, ওগো বন্ধু মোর! গর্জিয়া উঠিল ঘোর আর্ত হুহুঙ্কারে! বারে বারে বাসনা-তরঙ্গে তব পড়ে ছায়া তব প্রেয়সীর, ছায়া সে তরঙ্গে ভাঙে, হানে মায়া, উর্ধ্ব প্রিয়া স্থির! ঘুচিল না অনন্ত আড়াল, তুমি কাঁদ, আমি কাঁদি, কাঁদি সাথে কাল! কাঁদে গ্রীষ্ম, কাঁদে বর্ষা, বসন্ত ও শীত, নিশিদিন শুনি বন্ধু ঐ এক ক্রন্দনের গীত, নিখিল বিরহী কাঁদে সিন্ধু তব সাথে, তুমি কাঁদ, আমি কাঁদি, কাঁদে প্রিয়া রাতে! সেই অশ্রু-সেই লোনা জল তব চক্ষে — হে বিরহী বন্ধু মোরা — করে টলমল! এক জ্বালা এক ব্যথা নিয়া তুমি কাঁদ, আমি কাঁদি, কাঁদে মোর প্রিয়া। -দ্বিতীয় তরঙ্গ- হে সিন্ধু, হে বন্ধু মোর হে মোর বিদ্রোহী! রহি’ রহি’ কোন্ বেদনায় তরঙ্গ-বিভঙ্গে মাতো উদ্দাম লীলায়! হে উন্মত্ত, কেন এ নর্তন? নিষ্ফল আক্রোশে কেন কর আস্ফালন বেলাভূমে পড়ো আছাড়িয়া! সর্বগ্রাসী! গ্রাসিতেছ মৃত্যু-ক্ষুধা নিয়া ধরণীরে তিলে-তিলে! হে অস্থির! স্থির নাহি হ’তে দিলে পৃথিবীরে! ওগো নৃত্য-ভোলা, ধরারে দোলায় শূন্যে তোমার হিন্দোলা! হে চঞ্চল, বারে বারে টানিতেছ দিগন্তিকা-বন্ধুর অঞ্চল! কৌতুকী গো! তোমার এ-কৌতুকের অন্ত যেন নাই।- কী যেন বৃথাই খুঁজিতেছ কূলে কূলে কার যেন পদরেখা!-কে নিশীথে এসেছিল ভুলে তব তীরে, গর্বিতা সে নারী, যত বারি আছে চোখে তব সব দিলে পদে তার ঢালি’, সে শুধু হাসিল উপক্ষায়! তুমি গেলে করিতে চুম্বন, সে ফিরালো কঙ্কণের ঘায়! –গেল চ’লে নারী! সন্ধান করিয়া ফের, হে সন্ধানী, তারি দিকে দিকে তরণীর দুরাশা লইয়া, গর্জনে গর্জনে কাঁদ–“পিয়া, মোর পিয়া!’’ বলো বন্ধু, বুকে তব কেন এত বেগ, এত জ্বালা? কে দিল না প্রতিদিন? কে ছিঁড়িল মালা? কে সে গরবিনী বালা? কার এত রূপ এত প্রাণ, হে সাগর, করিল তোমার অপমান! হে মজনু, কোন্ সে লায়লীর প্রণয়ে উন্মাদ তুমি?-বিরহ-অথির করিয়াছে বিদ্রোহ ঘোষণা, সিন্ধুরাজ, কোন্ রাজকুমারীর লাগি’? কারে আজ পরাজিত করি’ রণে, তব প্রিয়া রাজ-দুহিতারে আনিবে হরণ করি?-সারে সারে দলে দলে চলে তব তরঙ্গের সেনা, উষ্ণীষ তাদের শিরে শোভে শুভ্র ফেনা! ঝটিকা তোমার সেনাপতি আদেশ হানিয়া চলে উর্ধ্বে অগ্রগতি। উড়ে চলে মেঘের বেলুন, ‘মাইন্’ তোমার চোরা পর্বত নিপুণ! হাঙ্গর কুম্ভীর তিমি চলে ‘সাবমেরিন’, নৌ-সেনা চলিছে নীচে মীন! সিন্ধু-ঘোটকেতে চড়ি’ চলিয়াছ বীর উদ্দাম অস্থির! কখন আনিবে জয় করি’-কবে সে আসিবে তব প্রিয়া, সেই আশা নিয়া মুক্তা-বুকে মালা রচি’ নীচে! তোমার হেরেম্-বাঁদী শত শুক্তি-বধূ অপেক্ষিছে। প্রবাল গাঁথিছে রক্ত-হার- হে সিন্ধু, হে বন্ধু মোর-তোমার প্রিয়ার! বধূ তব দীপাম্বীতা আসিবে কখন? রচিতেছে নব নব দ্বীপ তারি প্রমোদ-কানন। বক্ষে তব চলে সিন্ধু-পোত ওরা তব যেন পোষা কপোতী-কপোত। নাচায়ে আদর করে পাখীরে তোমার ঢেউ-এর দোলায়, ওগো কোমল দুর্বার! উচ্ছ্বাসে তোমার জল উলসিয়া উঠে, ও বুঝি চুম্বর তব তা’র চঞ্চুপুটে? আশা তব ওড়ে লুব্ধ সাগর-শকুন, তটভূমি টেনে চলে তব আশা-তারকার গুণ! উড়ে যায় নাম-নাহি-জানা কত পাখী, ও যেন স্বপন তব!-কী তুমি একাকী ভাব কভু আনমনে যেন, সহসা লুকাতে চাও আপনারে কেন! ফিরে চলো ভাঁটি-টানে কোন্ অন্তরালে, যেন তুমি বেঁচে যাও নিজেরে লুকালে!- শ্রান্ত মাঝি গাহে গান ভাটিয়ালী সুরে, ভেসে যেতে চায় প্রাণ দূরে-আরো দূরে। সীমাহীন নিরুদ্দেশ পথে, মাঝি ভাসে, তুমি ভাস, আমি ভাসি স্রোতে। নিরুদ্দেশ! শুনে কোন্ আড়ালীর ডাক ভাটিয়ালী পথে চলো একাকী নির্বাক? অন্তরের তলা হ’তে শোন কি আহবান? কোন্ অন্তরিকা কাঁদে অন্তরালে থাকি’ যেন, চাহে তব প্রাণ! বাহিরে না পেয়ে তারে ফের তুমি অন্তরের পানে লজ্জায়-ব্যথায়-অপমানে! তারপর, বিরাট পুরুষ! বোঝা নিজ ভুল জোয়ারে উচ্ছ্বসি’ ওঠো, ভেঙে চল কূল দিকে দিকে প্লাবনের বাজায়ে বিষাণ বলো, ‘ প্রেম করে না দুর্বল ওরে করে মহীয়ান্!’ বারণী সাকীরে কহ, ‘ আনো সখি সুরার পেয়ালা!’ আনন্দে নাচিয়া ওঠো দুখের নেশায় বীর, ভোল সব জ্বালা! অন্তরের নিষ্পেষিত ব্যথার ক্রন্দন ফেনা হ’য়ে ওঠে মুখে বিষর মতন। হে শিব, পাগল! তব কন্ঠে ধরি’ রাখো সেই জ্বালা-সেই হলাহল! হে বন্ধু, হে সখা, এতদিনে দেখা হ’ল, মোরা দুই বন্ধু পলাতকা। কত কথা আছে-কত গান আছে শোনাবার, কত ব্যথা জানাবার আছে-সিন্ধু, বন্ধু গো আমার! এসো বন্ধু, মুখোমুখি বসি, অথবা টানিয়া লহ তরঙ্গের আলিঙ্গন দিয়া, দুঁহু পশি ঢেউ নাই যেথা-শুধু নিতল সুনীল!- তিমির কহিয়া দাও-সে যেন খোলে না খিল থাকে দ্বারে বসি’, সেইখানে ক’ব কথা। যেন রবি-শশী নাহি পশে সেথা। তুমি র’বে-আমি র’ব-আর র’বে ব্যথা! সেথা শুধু ডুবে র’বে কথা নাহি কহি’,- যদি কই,- নাই সেথা দু’টি কথা বই, আমিও বিরহী, বন্ধু, তুমিও বিরহী!’ -তৃতীয় তরঙ্গ- হে ক্ষুধিত বন্ধু মোর, তৃষিত জলধি, এত জল বুকে তব, তবু নাহি তৃষার অবধি! এত নদী উপনদী তব পদে করে আত্মদান, বুভুক্ষু! তবু কি তব ভরলি না প্রাণ? দুরন্ত গো, মহাবাহু ওগো রাহু, তিন ভাগ গ্রাসিয়াছ-এক ভাগ বাকী! সুরা নাই-পাত্র-হাতে কাঁপিতেছে সাকী! হে দুর্গম! খোলো খোলো খোলো দ্বার। সারি সারি গিরি-দরী দাঁড়ায়ে দুয়ারে করে প্রতীক্ষা তোমার। শস্য-শ্যামা বসুমতী ফুলে-ফলে ভরিয়া অঞ্জলি করিছে বন্দনা তব, বলী! তুমি আছ নিয়া নিজ দুরন্ত কল্লোল আপনাতে আপনি বিভোল! পাশে না শ্রবণে তব ধরণীতে শত দুঃখ-গীত; দেখিতেছ বর্তমান, দেখেছ অতীত, দেখিবে সুদূরে ভবিষ্যৎ- মৃত্যুঞ্জয়ী দ্রষ্টা, ঋষি, উদাসীনবৎ! ওঠে ভাঙে তব বুকে তরঙ্গের মতো জন্ম-মৃত্যু দুঃখ-সুখ, ভূমানন্দে হেরিছ সতত! হে পবিত্র! আজিও সুন্দর ধরা, আজিও অম্লান সদ্য-ফোটা পুষ্পসম, তোমাতে করিয়া নিতি স্নান! জগতের যত পাপ গ্লানি হে দরদী, নিঃশেষে মুছিয়া লয় তব স্নেহ-পাণি! ধরা তব আদরিনী মেয়ে, তাহারে দেখিতে তুমি আস’ মেঘ বেয়ে! হেসে ওঠে তৃণে-শস্যে দুলালী তোমার, কালো চোখ বেয়ে ঝরে হিম-কণা আনন্দাশ্রু-ভরা! জলধারা হ’য়ে নামো, দাও কত রঙিন যৌতুক, ভাঙ’ গড়’ দোলা দাও,- কন্যারে লইয়া তব অনন্ত কৌতুক! হে বিরাট, নাহি তব ক্ষয়, নিত্য নব নব দানে ক্ষয়েরে ক’রেছ তুমি জয়! হে সুন্দর! জলবাহু দিয়া ধরণীর কটিতট আছো আঁকড়িয়া ইন্দ্রানীলকান্তমণি মেখলার সম, মেদিনীর নিতম্ব সাথে দোল’ অনুপম! বন্ধু, তব অনন্ত যৌবন তরঙ্গে ফেনায়ে ওঠে সুরার মতন! কত মৎস্য-কুমারীরা নিত্য তোমা’ যাচে, কত জল-দেবীদের শুষ্ক মালা প’ড়ে তব চরণের কাছে, চেয়ে নাহি দেখ, উদাসীন! কার যেন স্বপ্নে তুমি মত্ত নিশিদিন! মন্থর-মন্দার দিয়া দস্যু সুরাসুর মথিয়া লুন্ঠিয়া গেছে তব রত্ন-পুর, হরিয়াছে উচ্চেঃশ্রবা, তব লক্ষ্মী, তব শশী-প্রিয়া তার সব আছে আজ সুখে স্বর্গে গিয়া! ক’রেছে লুন্ঠন তোমার অমৃত-সুধা-তোমার জীবন! সব গেছে, আছে শুধু ক্রন্দন-কল্লোল, আছে জ্বালা, আছে স্মৃতি, ব্যথা-উতরোল উর্ধ্বে শূন্য, নিম্নে শূন্য,-শূন্য চারিধার, মধ্যে কাঁদে বারিধার, সীমাহীন রিক্ত হাহাকার! হে মহান! হে চির-বিরহী! হে সিন্ধু, হে বন্ধু মোর, হে মোর বিদ্রোহী, সুন্দর আমার! নমস্কার! নমস্কার লহ! তুমি কাঁদ,-আমি কাঁদি,-কাঁদে মোর প্রিয়া অহরহ। হে দুস্তর, আছে তব পার, আছে কূল, এ অনন্ত বিরহের নাহি পার–নাহি কূল–শুধু স্বপ্ন, ভুল। মাগিব বিদায় যবে, নাহি র’ব আর, তব কল্লোলের মাঝে বাজে যেন ক্রন্দন আমার! বৃথাই খুঁজিবে যবে প্রিয় উত্তরিও বন্ধু ওগো সিন্ধু মোর, তুমি গরজিয়া! তুমি শূন্য, আমি শূন্য, শূন্য চারিধার, মধ্যে কাঁদে বারিধার, সীমাহীন রিক্ত হাহাকার।
-prithom torongo- hey sindhu, hey bondhu mor, hey chiro-birohi ! hey otripto ! rohi' rohi' kon bedonay uddeliya otho tumi kanay kanay ? ki kotha shunate chao, kaye ki kohibe bondhu tumi ! prothikkhay cheye ase urdhey nila nimne bela-vumi ? kotha kow, hey duronto, bol tobo buke keno eto dhew jage, eto kolkol ? kiser e oshanto gorjon ? diba nai ratri nai, ononto krondon thamilo na, bondhu, tobo ! kotha tobo byatha baje ! more kow, kare nahi kobo ! kare tumi harale kokhon ? kon maya-monikar herisey sowpon ? ke se bala ? kotha tar ghor ? kobe dekhesiley tare ? keno holo por jare eto basiyase valo ! keno se asilo, ese keno se lukalo ? oviman korese se ? manini jhepese mukh nishithini-keshe ? ghumayese ekakini joshna-bishane ? chader chadni bujhi tai eto tane tomar sagor-prane, jagay joyar ? ki rohosshow ache chade lukano tomar ? bolo, bondhu bolo, oi chad oi se ki preowshi tomar ? o ki gan ? o ki kada ? oi, motto jol-cholochol- o ki huhunkar ? oi chad oi se ki preowshi tomar ? taniya se megher aral sudurika sudurei thakey chirokal ? chader kolonko oi, o ki tobo khudhatur chumboner dag ? dure thake kolonkini, o ki rag ? o ki onurag ? jano na ki, tai toronge achari moro akroshe brithayee ?... mone lage tumi jeno ononto purus ? apnar sowpne chile apni behus ! oshanto ! proshanto chiley . e nikhiley janitey na apnare chara torongo chilo na bukey, tokhono dolani ese deyni ko' nara ; bipul arshi-somo chile sowsccho, chile sthir tobo mukhe mukh rekhe ghumaito teer .- toposshi ! dheyani ! tarpor chad elo-kobe, nahi jani tumi jeno uthile shihori . hey mouni, kohile kotha- mori mori, sundor sundor ! sundor sundor gahi jagiya uthilo chorachor ! sei se adim shobdo, sei adi kotha, sei bujhi nirjoner sowjoner byatha. sei bujhi bujhile rajon eka se sundor hoy hoile du'jon !... kotha se uthilo chad hridoye na novey se-kotha jane na kew, janibe na, chirokal nahi-jana robey . eto dine var holo apnare niya eka thaka, keno jeno mone hoy- faka sob faka ! ke jeno chahiche morey, ke jeno ki nai ! jare pai tare jeno aro pete chai !... jagilo anondo-byatha jagilo jowar, lagilo torongey dola, vangilo duar, matiya uthile tumi ! kapiya uthilo kede nidratura vumi ! batase uthilo byape tobo hotasshas, jagilo ononto shunney nilima-usschas ! bissmowye bahiri elo nobo nobo nokkhottrer dol, romanchito holo dhora, buk chire elo tar trino-ful-fol . elo alo, elo bayu, elo tej pran, jana o ojana byope othe se ki ovinobo gan ! e ki matamati ogo e ki utrol . eto buk chilo hetha, chilo eto kol ! shakha o shakhitey jeno koto janashona, haowya ese dola dey, seo jeno chilo jana koto se apna ! joley joley dholadholi choloman begey, fuley-huley chumochumi- chorachorey bela uthey jegey ! anondo-bihobol sob aj kotha kohey, gahey gan, korey kolahole ! bondhu ogo sindhuraj ! sowpney chad-mukh heriya uthiley jagi, byatha korey uthilo o-buk . ki jeno se khudha jagey, ki jeno se pira, goley jay sara hiya, chirey jay joto snayu shira ! niya nesha, niya byatha-sukh duliya uthiley shindhu utshukh utmukh ! kon priyo-biroher sugovir chaya tomate porilo jeno, nil holo tobo sowssho kaya ! shindhu, ogo bondhu mor ! gorjiya uthilo ghor arto huhunkarey ! barey barey basona-torongey tobo porey chaya tobo preowsir, chaya se torongey vangey, haney maya, urdhey priya sthir ! ghuchilo na ononto aral, tumi kado, ami kadi, kadey sathey kal ! kadey grishmo, kadey borsha, bosonto o shit nishidin shuni bondhu, oi ek krondoner geet ! nikhil birohi kadey shindhu tobo sathey, tumi kado, ami kadi, kadi priya ratey ! sei oshru-sei lona jol tobo chokkhey-hey birohi bondhu mor-korey tolmol ! ek jala ek byatha niya tumi kado, ami kadi, kadey mor priya ! -Ditiyo Torongo- Hey shindhu, hey bondhu more, hey mor bidrohi ! rohi rohi kon bedonay torongo-bivongey mato uddam lilay ! hey unmotto, keno e norton ? nishfol akroshey keno kor ashfalon belavumey porow achariya ! sorbograshi ! grashitecho mrittu-khudha niya dhoronirey tiley-tiley ! hey osthir ! sthir nahi hotey diley prithibirey ! ogo nritto-vola, dhoraye dolay shunney tomar hindola ! hey chonchol, baray barey taniteso digontika-bodhur onchol ! koutuki go ! tomar e koutuker onto jeno nai- ki jeno brithay khujiteso kuley kuley kar jeno podrekha ! -ke nishithey esesilo vuley tobo tirey, gorbita se nari, joto bari ase chokhey tobo sob diley podey tar dari, se shudhu hasil upekkhay ! tumi gele koritey chumbon, se firalo konkoner ghay ! -gelo choley nari ! sondhan koriya fero, hey sondhani, tari dikey dikey toronir durasha loiya, gorjoney gorjoney kado-piya mori piya ! bolo bondhu, bukey tobo keno eto beg, eto jala ? ke dilo na protidan ? ke chirilo mala ? ke se gorobini bala ? kar eto rup eto pran, hey sagor, korilo tomar opoman ! hey 'mojnun' kon se layli'r pronoye unmad tumi ? -biroho-othir koriyaso bidroho ghosona, shindhuraj, kon rajkumarir lagi ? kare aj porajito kori roney, tobo priya raj-duhitarey anibey horon kori ? -sarey sarey doley doley choley tobo toronger sena, unshis tader shirey shovey shuvro fena ! jhotika tomar senapoti adesh haniya choley urdhey oggrogoty. ure choley megher beloon, 'mayeen' tomar chora porbot nipun ! hangor kumvir timi choley sabmerin, nou-sena cholishey nichey min ! shindhu-ghotokete chori choliyacho bir uddam osthir ! kokhon anibey joy kori-kobey se asibey tobo priya, sei asha niya mukta-bukey mala rochi nichey tomar herem-badi shoto shukti-bodhu opikkhitesey. probal gathise rokto-har- hey shindhu, hey bondhu mor-tomar priyar ! bodhu tobo dipannita asibe kokhon rochiteshe nobo nobo dip tari promod-kanon . bokkhey tobo choley shindhu-pot ora tobo jeno posha kopoti-kopot ! nachaye ador koro pakhirey tomar dheu-er dolay, ogo komol durbar . uschase tomar jol ulsiya othey, o bujhi chumbon tobo tar choncuputey ? asha tobo ore lubdho sagor-shokun, totvumi teney choley tobo asha-torikar gun ! ure jay nam-nahi-jana koto pakhi, o je sowpon tobo ! -ki tumi ekaki vabo kovu anmone jeno, sohosa lukate chao apnare keno ! fire cholo vati-taney kon ontorale, jeno tumi bechey jao nijere lukaley !- shranto majhi gahey gan vatiyali surey, vese jete chay pran durey aro durey simahin niruddesh pothey, majhi vase, tumi vaso, ami vasi srotey ! niruddesh ! shuney kon aralir dak vatiyali pothey cholow ekaki nirbak ? ontorer tola hote shonow ki ahoban ? kon ontorika kadey ontoraley thaki jeno, chahe tobo pran ! bahirey na peye tare fer tumi ontorer paney lojjay-byathay-opomaney ! tarpor, birat purus ! bojho nij vul joyare usshosi otho, vengey cholow kul dikey dikey plaboner bajaye bsan, bolo, prem kore na durbol ore kore mohiyan ! baruni sakirey koho, ano shokhi surar peyala ! anondey nachiya otho dukher neshay bir, vol sob jala ! ontore nispesito byathar krondon fena hoye othey mukhey bisher moton. hey shib, pagol ! tobo konthey dhori rakh sei jala-sei holahol ! hey bondhu, hey sokha, etodiney dekha holo, mora dui bondhu polatoka . koto kotha ase-koto gan ase shonabar, koto byatha janabar ase-shindhu, bondhu go amar ! eso bondhu, mukhomukhi bosi ! othoba taniya loho toronger alingon diya, duhu poshi dheu nai jotha-shudhu nitol shunil !- timire kohiya dao- se jeno kholey na khil thakey dare bosi . seikhaney kobo kotha . jeno robi-shoshi nahi poshey setha . tumi robey ami robo-ar robey byatha ! setha shudhu dubey robo kotha nahi kohi,-\ jodi koi,- nai setha duti kotha boi, amio birohi, bondhu, tumio birohi ! -Tritio torongo- hey khudhito bondhu mor, trishito jolodhi, eto jol bukey tobo, tobu nahi trishar obodhi ! eto nodi uponodi tobo pode kore attodan, buvukkhu ! tobu ki tobo vorilo na pran ? duronto go, mohabahu, ogo rahu, tin vag grasiyasho-ek vag baki ! sura nai-patro hatey kapiteshe saki ! hey durdom. kholow kholow lholow dar . sari sari giri-dori daraye duyare kore prothikkha tomar . shossya-shyama bosumoti fule-foley voriya onjoli korishey bondona tobo, boli ! tumi aso niya nij duronto kollol aponatey apni bivol ! poshey na shroboney tobo dhoronir shoto dukkho-geet; dekhitesho bortoman, dekhesho otit, dekhibe sudur vobissot- mrittujjoyee drosta, rishi, udasinbot ! othe vange tobo buke toronger moto jonmo-mrittu dukkho-sukh, vumanonde hericho sotot ! hey pobitro ! ajio sundor dhara, ajio omlan sodyo-fota puspo-somo, tomatey koriya niti snan ! jogoter joto pap glani dhora tobo adorini meye taharey dekhitey tumi aso megh beye ! hese othe triney-shossya dulali tomar, kalo chok beye jhore him-kano anondashru-var ! jolodhara hoye namo, dao koto rongin joutuk, vango' goro' dola dao- konnyare loiya tobo ononto koutuk ! hey birat, nahi tobo khoy nitto nobo nobo daney khoyere koresho tumi joy ! hey sundor ! jolbahu diya dhoronir kotitoto aso akriya indronilkantomoni mekhlar somo, medenir nitombo-dolar sathe dol onupom ! bondhu, tobo onanto joubon torongey fenaye othe surar moton ! koto motsho-kumarira nitto toma' jase, koto jol-debider shusko mala pore tobo choroner kase, cheye nahi dekho, udasin ! kar jeno sowpne tumi motto nishidin ! monthon-mondar diya dossu surasur mothiya lunthiya geshey tobo rotno-pur, hariyashey uschoishroba, tobo lokkhi, tobo shoshi-priya, tara sob ase aj sukhey sorgey giya ! korese lunthon tomar omritto-sudha-tomar jibon ! sob geshe, ase shudhu krondon-kollol, ase jala ase sriti, byatha-utrol urdhey shunno,-nimney shunno-shunno charidhar, modhya kadey baridhar, simahin rikto hahakar ! hey mohan ! hey chiro-birohi ! hey shindhu, hey bondhu more, hey more bidrohi ! sundor amar ! nomoskar ! nomoskar loho ! tumi kado-ami kadi,-kadey more priya ohoroho. hey dustor, ase tobo par, ase kul, e ononto birohey nahi paro,-nahi kul-shudhu sowpno, vul magibo biday jobe, nahi robo ar, tobo kolloler majhe baje jeno krondon amar ! brithayi khujibey jobe priya, uttorio bondhu ogo shindhu more, tumi gorjiya ! [shindhu hillol]